বাংলাদেশ কম্পিউটার কাউন্সিল (বিসিসি) গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার
Text size A A A
Color C C C C

সর্ব-শেষ হাল-নাগাদ: ২৭ ফেব্রুয়ারি ২০২৩

স্ট্যান্ডার্ডস উন্নয়ন

তথ্যপ্রযুক্তিতে বাংলাভাষার ব্যবহার সম্প্রসারণ ও তা বাধাহীনভাবে  সবার ব্যবহার উপযোগী করতে কতিপয় মান উন্নয়নের প্রয়োজনীয়তা রয়েছে। বাংলাদেশ স্ট্যান্ডার্ডস এন্ড টেস্টিং ইন্সটিটিউশন (বিএসটিআই) মান ঘোষণার কাজটি করে থাকে। মান ঘোষণার বিভিন্ন কারিগরি দিক এবং এর খসড়া প্রস্তুতের কাজটি বাংলাদেশ কম্পিউটার কাউন্সিল করে থাকে। ইতোমধ্যে বাংলাদেশ কম্পিউটার কাউন্সিল বেশ কিছু মান উন্নয়নের এবং একই সঙ্গে বিদ্যমান মান আধুনিকায়নের কাজ করছে। এসব মান বিএসটিআই বাংলাদেশ মান হিসেবে অনুমোদন ও করেছে। বাংলাদেশ মানসমূহ - 

 

১.  Bangladesh Standard Specification for Bangla Coded Character Set for    Information Interchange (Third Revision) (BDS 1520:2018)

আধুনিক তথ্যপ্রযুক্তি বিশ্বে ডিজিটাল প্রযুক্তিতে কোন কাজ করতে হলে সে ভাষার যাবতীয় বর্ণ ও চিহ্নের ডিজিটাল কোডিং ব্যবহার করা হয়। ভিন্ন ভিন্ন প্রতিষ্ঠান ঐ ভাষার জন্য ভিন্ন ভিন্ন কোডিং পদ্ধতি ব্যবহার করলে, এক পদ্ধতিতে লেখা টেক্সট আরেক পদ্ধতি ব্যবহারকারী যন্ত্রে পাঠযোগ্য হবে না। এজন্য একটি ভাষার কোডিং পদ্ধতির একটি সুনির্দিষ্ট মান থাকলে, কোডিং পদ্ধতির ভিন্নতা জনিত সমস্যা থেকে পরিত্রাণ পাওয়া যায়। কম্পিউটারে বাংলায় কাজ করার জন্য বাংলাদেশে অনেকগুলো কোডিং পদ্ধতি চালু ছিল যা অনেক সমস্যার কারণ ছিল। এ সমস্যা নিরসনে ১৯৯৫ সনে এ সংক্রান্ত জাতীয় মান BDS 1520 প্রণয়ন করা হয়। বিশ্বে যতগুলো ভাষা প্রচলিত আছে তার জন্য গ্রহণযোগ্য আন্তর্জাতিক কোডিং পদ্ধতি প্রণয়ণ করে থাকে ইউনিকোড কনসোর্টিয়াম। বাংলাদেশের ঘোষিত জাতীয় মানসমূহ আন্তর্জাতিকভাবে সামঞ্জস্যপূর্ণ রাখার প্রয়োজনীয়তা আছে।  এ জন্য ইউনিকোডের সাথে সামঞ্জস্য রেখে BDS 1520:1995 এর ১ম রিভিশন করা হয় ২০০০ সালে। এরপর ২০১১ সালে বিদ্যমান ইউনিকোড ৬.০ এর অনুসরণে মানটি হালনাগাদ করে BDS 1520:2011 প্রণয়ন করা হয়।

পরবর্তীকালে ইউনিকোড ১০.০ প্রকাশিত হয় এবং এতে কিছু পরিবর্তন দেখা যায়। তথ্যপ্রযুক্তিতে বাংলা ভাষার ব্যবহার প্রমিতকরণ সংক্রান্ত জাতীয় কমিটি বিষয়টি পর্যালোচনা করে এবং BDS 1520:2011 এর ৩য় রিভিশন করার জন্য প্রয়োজন অনুধাবন করে। এর পরিপ্রেক্ষিতে বিসিসি BDS 1520:2018 এর খসড়া প্রণয়ণ করে এবং তা বাংলাদেশ মান হিসেবে ঘোষণার জন্য বিএসটিআইতে প্রেরণ করা হয়। বিগত ২৬ ফেব্রুয়ারী ২০১৮ তারিখ বিএস টি আই কর্তৃক খসড়া মানটি অনুমোদিত হয়।  

ব্যবহারের ক্ষেত্রঃ

BDS 1520:2018 মানটি বাংলা ভাষার সংশ্লিষ্ট যেকোন ধরনের সফটওয়ার উন্নয়নের ক্ষেত্রে অনুসরণযোগ্য। যেমন সরকারী পর্যায়ে কোন সফটওয়ারে বাংলা ব্যবহৃত হলে BDS 1520:2018 অনুযায়ী কোডিং পদ্ধতি অনুসরণ করা বাঞ্চনীয়।  যেহেতু এ কোডিং পদ্ধতি ইউনিকোডের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ  সেহেতু এ মানটি অনুসরণ করে সফটওয়ার উন্নয়ন করা হলে তা ওয়েব বা অনলাইন মাধ্যমে সমানভাবে কার্যকর থাকবে।

 

২.    Bangladesh Standard Specification for Computer Bangla Keyboard (First Revision) (BDS 1738:2018)

বিগত ২০০৪ সালে জাতীয় বাংলা কম্পিউটার কি-বোর্ড প্রণয়নে উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়। উক্ত সময়কালে দেশে একাধিক কী-বোর্ড (যেমন- বিজয়, বসুন্ধরা, মুনীর, বর্ণ, লেখনী ইত্যাদি) বিদ্যমান থাকার কারণে সৃষ্ট সমস্যা নিরসনকল্পে বাংলা কী-বোর্ডের একটি প্রমিত মান নির্ধারণে এ উদ্যোগ নেয়া হয়। এর পরিপ্রেক্ষিতে বাংলাদেশ কম্পিউটার কাউন্সিল দেশে বিদ্যমান বিভিন্ন বাংলা কী-বোর্ড পর্যালোচনা করে জাতীয় বাংলা কম্পিউটার কী-বোর্ড প্রণয়নের কাজ সম্পন্ন করে।

বিসিসির পর্যালোচনার পরিপ্রেক্ষিতে প্রণীত কী-বোর্ডটিকে বিএসটিআই  বাংলা কম্পিউটার কী-বোর্ডের জাতীয় মান হিসেবে ঘোষণা করে যা বাংলাদেশ মান BDS 1738:2004 হিসেবে পরিচিত ছিল। জাতীয় বাংলা কী-বোর্ডে বর্ণ ও চিহ্নসমূহ মোট ৪ টি স্তরে বিন্যাস করা হয়। বহুল ব্যবহৃত বর্ণ, চিহ্ন ও যুক্তাক্ষর ১ম ও ২য় স্তরে বিন্যাস করে অপেক্ষাকৃত কম ব্যবহৃত বর্ণ ও চিহ্নগুলোকে ৩য় ও ৪র্থ স্তরে রাখা হয়।

ইতোমধ্যে তথ্যপ্রযুক্তিতে বাংলা ভাষা প্রমিতকরণ সংক্রান্ত জাতীয় কমিটি বিদ্যমান জাতীয় বাংলা কম্পিউটার কী-বোর্ড আধুনিকায়নের প্রয়োজনীয়তা অনুভব করে। এর পরিপ্রেক্ষিতে বিসিসি আধুনিকায়নের কাজ সম্পাদন করে বিএসটিআইতে প্রেরণ করে যা BDS 1738:2018 হিসেবে অনুমোদন লাভ করে।

ব্যবহারঃ

দেশে চলমান ডিজিটাইজেশন কাজ সহ লেখালেখি, যন্ত্র উতপাদনকারীগণ কম্পিউটার, ল্যাপটপ এবং অনুরূপ অন্যান্য যন্ত্রের কী-বোর্ডে বাংলাভাষার ক্ষেত্রে সহজ সমাধান হিসেবে এ কী-বোর্ড ব্যবহার করা যাবে। সরকারী পর্যায়ে কম্পিউটার ব্যবহারকারীদের Phonetic বা অন্য কোন কী-বোর্ডের পরিবর্তে শুধুমাত্র জাতীয় কী-বোর্ডে দক্ষতা অর্জন করলে যথেষ্ট হবে।

 

৩. Bangladesh Standard Codes for Information Interchange (BDS 1934:2018)

বাংলা ভাষার জন্য ইউনিকোড ভিত্তিক কোডিং পদ্ধতি প্রণয়ন হবার পূর্বে তথ্যপ্রযুক্তিতে বাংলা লিখার ক্ষেত্রে American Standard Code for Information Interchange (ASCII) এর ৭-বিট কোড ব্যবহার করা হত। ১৯৮০ সাল থেকে প্রায় বিগত দশক পর্যন্ত যাবতীয় বাংলা লেখালেখি ASCII  ব্যবহার করেই সম্পন্ন হত। ঐ সময়কালের বাংলায় উন্নয়ন করা সফটওয়ারসমূহ ASCII নির্ভর ছিল। কিন্তু ৭-বিট হবার কারণে ASCII এর মাধ্যমে ১২৮ টির অধিক বাংলা বর্ণ, চিহ্ন ও যুক্তাক্ষর লেখা সম্ভব হত না। তবে বহুল ব্যবহৃত অধিকাংশ বর্ণ, চিহ্ন ও যুক্তবর্ণ ASCII কোডে অন্তর্ভূক্ত করা হয়েছিল।

ইউনিকোডের ১৬ বিট ভিত্তিক কোড চালু হবার ফলে ASCII ভিত্তিক বাংলা সফটওয়ারগুলো ইউনিকোড ব্যবহার শুরু করে। কিন্তু বিগত তিন দশকে সৃষ্ট বাংলাভাষার বিষয়বস্তু ASCII ভিত্তিক রয়ে গেছে। যার ফলে বর্তমানে ইউনিকোড ভিত্তিক ১৬ বিটের বাংলা কোড দিয়ে যাবতীয় কাজ করা গেলেও একাডেমিক কাজে, গবেষণায় এবং ইতোমধ্যে সৃষ্ট বাংলা বিষয়বস্তুর ব্যবহার কিংবা রুপান্তরের প্রয়োজনে ASCII ভিত্তিক বাংলা বর্ণ ও চিহ্ন কোডিং এর একটি জাতীয় মান থাকা প্রয়োজন। এজন্য বাংলাদেশে ASCII ভিত্তিক বাংলা ভাষার জনপ্রিয় সফটওয়ারসমূহ পর্যালোচনা করে বাংলাদেশ কম্পিউটার কাউন্সিল Bangladesh Standard Code for Information Interchange (BSCII) এর খসড়া প্রণয়ন করে। এতে মোট ২১০ বাংলা বর্ণ, চিহ্ন ও যুক্তাক্ষর অন্তর্ভূক্ত করা হয়েছে। বিগত ২৬ ফেব্রুয়ারী ২০১৮ তারিখ উক্ত খসড়াটি বিএসটিআই কর্তৃক BDS 1934:2018 হিসেবে অনুমোদন লাভ করে।  

ব্যবহারঃ

BSCII মূলত ইংরেজী ASCII এর সমতূল্য। পূর্বের ASCII ভিত্তিক কোন বাংলা লেখালেখি বিষয়ক ব্যবহারিক অথবা গবেষণা কাজে BSCII মানটি অনুসরণ করা যেতে পারে।